শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বেকার যুবক, কৃষকরা নিজ উদ্যোগে শাক-সবজি চাষ করে ব্যাপক উন্নতি লাভ করেছে। উপজেলার বাদাঘাট ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ব্যাপক হারে সবজি চাষের কারণে সবজি পল্লী হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। সবজি চাষ করে অনেকেই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। এই এলাকার কৃষকরা বর্তমানে শাক-সবজি উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে। অধিকাংশ শাক-সবজি এখন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে উৎপাদিত করা হচ্ছে। ফলে সবজিগুলো স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে সরবরাহ করছে। এখন কৃষকদের মাঝে চলছে যেন নিরব প্রতিযোগিতা।
স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, জেলার ভাটির জনপদ তাহিরপুর উপজেলা ইরি, বোরো ধান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। ধান চাষ হয় প্রচুর পরিমাণে। এখানকার কৃষকরা শাক-সবজির জন্য জেলার দক্ষিণাঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতিকালে বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাষে আশানুরূপ ফল পাওয়ায় তারা বর্ষা মৌসুমেও অধিক হারে জমিতে শাক-সবজি উৎপাদনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।
উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের আমতৈল, পুরানঘাট, ব্রাক্ষনগাও, পৈলনপুর, বারহাল, শিমুলতলা ও বাদাঘাট ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া, কামরাবন্দ, নাগরপুরসহ অনেক গ্রামের জীবন সংগ্রামী মানুষ জীবন ও জীবিকার তাগিদে নিষ্ফলা জমিকে ব্যক্তি উদ্যোগে বারো মাস সবজি চাষাবাদের জমিতে রূপান্তরিত করেছে। মাঠ, বাড়ির উঠান, ফসলী জমি, চর, হাওর ও পুকুর পাড় সবর্ত্র সবজি বাগান। গ্রামগুলোর শত শত নিম্ন আয়ের পরিবার ও বেকার যুবক সম্প্রতিকালে শিম, ফুল কপি, টমেটো, করলা, বটবটি, শসা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে অনেক গরিব কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছে।
এ ব্যাপারে কৃষক জজ মিয়া জানান, উপজেলার অন্য স্থানের চেয়ে এই অবস্থান অনেকটা উঁচু হওয়ায় ও কম খরচে শাক-সবজি চাষাবাদ করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করা যায়। অনেকটাই কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ছাড়াই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখানে লাল শাক, মুলা, লাউ, করলা, বেগুন, শসা, শিম, বরবটি, বাধা কপি, ফুল কপি, আলু, পুঁইশা ককুমড়া, তরমুজসহ বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ হচ্ছে। আর এই সবজি চাষকে কেন্দ্র করে উপজেলার বাদাঘাট রোববার ও বৃহস্পতিবার বাজারে বাসে হাট। বিভিন্ন প্রজাতির শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন সবজি বিক্রিকালে লাভবান হয়েছি।
এ ব্যাপারে সবজি চাষিরা আরো জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এখানে আসেন সবজি কিনতে। তারা রিকশা ও ঠেলাগাড়ি চড়ে আবার অনেক কৃষক নিজ মাথায় বহন করে সবজি বাদাঘাট বাজার, উপজেলা সদরের বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায় বিক্রি করার জন্য। কিন্তু যাতায়াতের সুব্যবস্থা না থাকায় তারা জাতীয় বাজার দর সম্পর্কে অবহিত হতে পারচ্ছেন না এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে শাক-সবজি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গুটি কয়েক পাইকারদের দামের মধ্যেই তারা সীমাবদ্ধ আছে। এ কারণে তারা বেশি লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি করে উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত করা হলে তাহিরপুর উপজেলাসহ সুনামগঞ্জের প্রতিটি উপজেলা শাক-সবজি উৎপাদনের পরিমাণ কয়েকগুন বৃদ্বি করা সম্ভব হবে বলে তাহিরপুর উপজেলার সবজি চাষিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।